
বর্ষঃ ২ সংখ্যাঃ ২
ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
দ্বীন চর্চা হোক বাংলা ভাষায়
ইঞ্জি. তাহসিন আল মাহি
Views: 160
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাষাকে করেছেন আমাদের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষাবৈচিত্র্য তাঁর রুবুবিয়াতের এক অনন্য নিদর্শন। কালের পরিক্রমায় ভাষার বিবর্তন ঘটেছে। ভিন্ন ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের পারস্পরিক সংমিশ্রণের ফলে ভাষায় পরিবর্তন আসে, ভাষার শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়, কখনো বা নতুন ভাষার উদ্ভব ঘটে।
প্রতিটি মানুষ তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসে, তাকে সারাজীবন ধারণ করে রাখতে চায়; এটা তার অস্তিত্বের অংশ। বাংলা ভাষার আছে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। পাকিস্তান গঠনের পরপরই রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী নেতাদের রোষানলে পড়ে আমাদের মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলা ভাষার পক্ষে দাবী আদায় করতে গিয়ে রক্তাক্ত হয় এদেশের মাটি। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাস আসলে বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলে। তবে আলোচনাটা ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক না হয়ে বাংলা সন অনুযায়ী ফাল্গুন মাস কেন্দ্রিক হলে যথাযথ হতো।
ইসলাম এদেশে এসেছে সাহাবায়ে কেরামের হাত ধরে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই ইসলাম এদেশে চর্চিত হয়ে আসছে বটে, তবে বাংলা ভাষায় সে চর্চা যেন একেবারে মৃত। এদেশের মানুষ দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার অনেক বড় একটি কারণ হচ্ছে বাংলায় দ্বীনি বই-পত্র কম থাকা। এদেশের মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামের পঠন-পাঠন হয়ে এসেছে ফার্সী ও ঊর্দূ ভাষার মাধ্যমে। অথচ দুটির কোনোটিই এদেশের মানুষের ভাষা নয়। ফলে আরবী ভাষার ইসলাম ফার্সী-ঊর্দূ হয়ে ঘুরে এসে যখন বাংলায় পৌঁছেছে ততক্ষণে ইসলামের মূল রূহ নষ্ট হয়ে গিয়েছে; তাতে সংযোজন যেমন ঘটেছে, তেমন বিয়োজনও।
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রকৃত ইসলাম জানতে ও বুঝতে হলে আরবী থেকে সরাসরি বাংলায় চর্চা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য এদেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় ঊর্দূ-ফার্সীর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আরবী ভাষার ওপর শতভাগ গুরুত্বারোপ করা জরুরী। সেইসাথে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে দ্বীন প্রচারের সুবিধার্থে মাদ্রাসাগুলোতে বাংলা ভাষার চর্চা শুরু করা-ও জরুরী। এদেশের মাদ্রাসাগুলোতে বাংলা ভাষা নিয়ে চর্চা হয় না বললেই চলে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে নিজেদের বার্তা পৌঁছাতে আলেম কিংবা তালেবুল ইলমদেরকে বেশ বেগ পোহাতে হয়, যা জনসাধারণ এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগ শূণ্যতা তৈরী হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। এছাড়া বাংলা আয়ত্ত্বে না থাকার ফলে বাংলা ভাষার অনুবাদের জগতে হাতেগোণা কয়েকজন বাদে কেউই এগিয়ে আসতে চান না।
ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ বাংলা ভাষায় তুলে ধরতে এদেশের আহলে হাদীস ওলামায়ে কেরাম যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন, তা ইতিহাসে লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। তবে তাদের খেদমতের এই ধারা পরবর্তীতে তেমন আর প্রসারিত হয়নি। ফলে দেখা যায় বাংলা ভাষায় কুরআন, হাদীস, তাফসীর কিংবা অন্যান্য কিতাবসমূহের অনুবাদ অপ্রতুল।
কি]ছু আলেম এবং তালেবুল ইলম বাংলা ভাষার ইলমী ময়দানের এই শূণ্যতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। বক্তৃতার ময়দানে উন্নতি অনেক হয়েছে। আপাতত সেদিকে আর নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা ইলমী খেদমত করতে পারবেন তারা দ্রুত বইয়ের জগতে আসুন। সেইসাথে যারা বিত্তবান আছেন তারাও ইলমী ময়দানে অর্থ ব্যয় করুন। খুব শীঘ্রই বাংলা ভাষার জগত ইলমী বইপত্রে ভরে যাবে ইনশাআল্লাহ।