বর্ষঃ ১ সংখ্যাঃ ২
ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কি তাবেঈ ছিলেন?
মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আসারী
মূল: আল্লামা গোলাম মোস্তফা জহির আমানপুরী
Views: 280
ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর তাবেঈ হওয়া প্রমাণিত নয়।
১. ইমাম হামযা সাহমী রহিমাহুল্লাহ (৪২৭ হিজরী) বলেন, “سُئِلَ الدَّارَقُطْنِي وَأَنَا أَسْمَعُ عَنْ سَمَاع أَبِي حَنِيفَةَ يَصِحُ؟ قَالَ : لَا وَلَا رُؤْيَةٌ وَلَمْ يَلْحَقِّ أَبُو حَنِيفَةَ أَحَدًا مِّنَ الصَّحَابَةِ”
“আমি শুনেছি যে, ইমাম দারাকুতনী রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হলো- (সাহাবীদের থেকে) আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর শ্রবণ কি প্রমাণিত? তিনি বললেন- না, (কোন সাহাবীকে) দেখাও প্রমাণিত না। আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কোন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করেননি।”১
হাদীসের মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণের উক্ত মতামতের ওপর ইজমা আছে, কেউই এর বিরোধিতা করেননি।
২. হাফেয খতীব বাগদাদী রহিমাহুল্লাহ (৪৬৩ হিজরী) বলেছেন, “لَا يَثْبُتُ لِأَبِي حَنِيفَةَ سَمَاعٌ مِّنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكِ”।
“আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে আবু হানীফার শ্রবণ প্রমাণিত নয়।”২
৩. হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ (৭৪৮ হিজরী) বলেছেন, “يَزْعُمُ الْوَاضِعُ : أَنَّ الْإِمَامَ ارْتَحَلَ بِهِ أَبُوهُ، وَدَارَ عَلَى سَبْعَةٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ المُتَأَخْرِينَ، وَشَافَهَهُمْ، وَإِنَّمَا الْمَحْفُوظُ، أَنَّهُ رَأَى أنس بن مَالِكِ لَمَّا قَدِمَ عَلَيْهِمُ الْكُوفَة”
“কোনো কোনো মিথ্যুক বলেছে যে, আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তার পিতার সাথে সফর করেন এবং পরবর্তী যামানার ৭ জন সাহাবীর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন। যদিও সঠিক কথা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কেবলমাত্র সাইয়েদেনা আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছেন, যখন তিনি কুফায় আসেন।”৩
হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ’র মতানুযায়ী ইমাম আবু হানীফা সাইয়েদেনা আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখেছেন, তার মানে ইমাম সাহেব স্বাভাবিকভাবেই তাবেঈ। যার উপর ভিত্তি করে হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ এই কথা বলেছেন, সেটাই বাতিল। অত্র বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
৩.১ ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত যে- “رَأَيْتُ أَنَسًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ”।
“আমি সাইয়েদেনা আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কে দেখেছি।”৪
পর্যালোচনা: এই বর্ণনাটি বাতিল। সাঈফ বিন জাবির এর জীবনী পাওয়া যায় না।
৩.২ ইমাম আবু নুআইম ফযল বিন দুকাইন রহিমাহুল্লাহ (২১৮ হিজরী) থেকে বর্ণিত আছে, “رَأَى أَنس بن مالك”।
“ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখেছেন।”৫
পর্যালোচনা: এই বর্ণনাটি মিথ্যা। কারণ-
(ক) আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সাল্লাত আবুল আব্বাস হামানী হলো কাযযাব এবং হাদীস জালকারী।৬
(খ) ইমাম দারাকুতনী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “يَضَعُ الْحَدِيثَ”, সে হাদীস জাল করতো।৭
(গ) হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ একে “মাতরুক” আখ্যা দিয়েছেন।৮
৩.৩ হাফেয খতীব বাগদাদী রহিমাহুল্লাহ (৪৬৩ হিজরী) বলেন, “رَأَى أَنَسَ بنَ مَالِكِ”।
“ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ সাইয়েদেনা আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখেছেন।”৯
৩.৪ হাফেয ইবনুল জাওযী (৫৯৭ হিজরী) বলেছেনঃ “إِنَّمَا رَأَى أَنسَ بْنَ مَالِكِ بِعَيْنِهِ”
“নিশ্চয় ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ সাইয়েদেনা আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখেছেন।১০
এগুলো ভিত্তিহীন বর্ণনা। এগুলোর কোনো দলীল নেই। ইমাম দারাকুতনী রহিমাহুল্লাহ এই বর্ণনাগুলোর রদ্দ করেছেন।
৪. আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী রহিমাহুল্লাহ (১০১৪ হিজরী) বর্ণনা করেন: “جَمَاعَةٌ مِّنَ الْمُحَدِّثِينَ أَنْكَرُوا مُلَاقَاتَهُ مَعَ الصَّحَابَةِ”।
“মুহাদ্দিসগণের একটি বড় অংশ সাহাবাগণের সাথে আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ’র সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছেন।১১
সাইয়েদেনা আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ শ্রবণ উল্লেখ করেছেন এমন যতগুলো মারফু বর্ণনা আছে তার সবগুলোই মিথ্যা। এগুলো (মিথ্যাবাদী) আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সাল্লাত হামানী সহ অন্যান্যদের জাল করা।
৫. ইবনুল নাদীম (৪৩৮ হিজরী) লিখেছেন, “كَانَ مِنَ التَّابِعِينَ لَقِي عِدَّةٌ مِّنَ الصَّحَابَةِ”।
“আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাবেঈদের মধ্যে একজন। তিনি কয়েকজন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।”১২
পর্যালোচনা: ইবনুল নাদীম সিকাহ নন, বরং রাফেযী ও মুতাযিলা ছিলেন। অতএব তার কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য নয়। হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ তার সম্পর্কে বলেছেন, “هُوَ غَيْرُ مَوْلُوقِ بِهِ وَمُصَنَّفُهُ الْمَشْكُورُ يُنَادِي عَلَى مَنْ صَنَّفَهُ بِالْإِعْتِرَالِ وَالزَّيْعِ، نَسْأَلُ اللهَ السَّلَامَةَ . لَمَّا طَالَعْتُ كِتَابَهُ ظَهَرَ لِي أَنَّهُ رَافِضِيٌّ مُعْتَزَلِيٌّ فَإِنَّهُ يُسَمِّي أَهْلَ السُّنَّةِ الْحَشَوِيَّةَ وَيُسَمِّي الأَشَاعِرَةَ الْمُجَبْرَةَ وَيُسَمِّي كُلِّ مَنْ لَمْ يَكُنْ شِيعَيًّا عَامِيًّا وَذَكَرَ فِي تَرْجَمَةِ الشَّافِعِيِّ شَيْئًا مُّخْتَلَقًا ظَاهِرَ الْإِفْتَرَاءِ”
“এ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নয়। তার উল্লিখিত লেখা স্পষ্ট ভাবেই বলছে যে, এটি কোনো মুতাযিলা ও গোমরাহ এর লেখা। আল্লাহ তাআলা হেফাযত করুন! … যখন আমি তার লেখা বই পড়ি তখন আমি বুঝতে পারি যে, সে হলো রাফেযী-মুতাযিলা। সে আহলে সুন্নাত কে “হাশবিয়্যা”, আশআরীদেরকে “মুজাব্বারা” এবং যে ব্যক্তি শীয়া না তাদের প্রত্যেককে সে “মূর্খ” বলে অভিহিত করে। সে ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ’র জীবনী লিখতে গিয়ে এমন সব কথা উল্লেখ করেছে যা সর্বৈব বানোয়াট-মিথ্যা।১৩
৬. হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ তাকরীবুত তাহযীব (৭১৫৩)-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর উল্লেখ করেছেন। এই খণ্ডের কোনো রাবীর কোনো সাহাবী থেকে শ্রবণ প্রমাণিত নেই। প্রমাণিত হলো যে, হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ’র নিকট ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাবেঈ ছিলেন না।
আল্লামা ইবনে নাজীম হানাফী রহিমাহুল্লাহ (৯৭০ হিজরি) লিখেছেন, “أَوْ لَيْسَ مِنْهُمْ بِنَاءً عَلى مَا صَرَّحَ بِهِ شَيْخُ الْإِسْلَامِ ابْنُ حَجَرٍ فَإِنَّهُ جَعَلَهُ مِنَ الطَّبَقَةِ السَّادِسَةِ مِمَّنْ عَاصَرَ صِغَارَ التَّابِعِينَ وَلَكِنْ لَمْ يَثْبُتُ لَهُ لِقَاءُ أَحَدٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ ذَكَرَهُ فِي تَقْرِيبِ التَّهْذِيبِ”
“…ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাবেঈদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নন। এটির ভিত্তি হলো সেটাই যা শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে ৬ষ্ঠ খণ্ডে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। এই খণ্ডে উল্লিখিত রাবীগণ নবীন তাবেঈগণের সমসাময়িক। কিন্তু কোনো সাহাবীর সাথে তাদের সাক্ষাৎ প্রমাণিত নয়। এই কথা তিনি তাকরীবুত তাহযীবে (ভূমিকায়) উল্লেখ করেছেন।১৪
৭. আল্লামা ইব্রাহীম বিন আলী আবু ইসহাক শীরাযী রহিমাহুল্লাহ (৪৭৬ হিজরী) বলেন, “لَمْ يَأْخُذْ أَبُو حَنِيفَةَ عَنْ أَحَدٍ مِّنْهُمْ”।
“ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কোনো সাহাবী থেকে রেওয়ায়েত নেননি।১৫
৮. আল্লামা ইবনে আসীর রহিমাহুল্লাহ (৬০৬ হিজরি) বলেছেন, “لَمْ يَلْقَ أَحَدًا مِّنْهُمْ وَلَا أَخَذَ عَنْهُ؛ وَأَصْحَابُهُ يَقُولُونَ : إِنَّهُ لَقِيَ جَمَاعَةٌ مِّنَ الصَّحَابَةِ وَرَوَى عَنْهُمْ، وَلَا يَثْبُتُ ذَلِكَ عِنْدَ أَهْلِ النَّقْلِ”।
“ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কোনো সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করেননি এবং তাদের মধ্যে কারো থেকে রেওয়ায়েত নেননি। যদিও হানাফী মুকাল্লিদরা বলে যে, তিনি সাহাবীগণের একটি বড় অংশের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের থেকে রেওয়ায়েত নিয়েছেন। এই কথা মুহাদ্দিসগণের নিকট প্রমাণিত নয়।”১৬
একই কথা আল্লামা ইবনে খাল্লিকান১৭, আল্লামা আবুল ফিদা১৮, আল্লামা ইবনুল ওয়ারদী১৯, আল্লামা ইয়াফঈ২০ এবং আল্লামা আবুল ইয়ামিন আল আলামী২১ বলেছেন।
৯. হাফেয নববী রহিমাহুল্লাহ (৬৭৬ হিজরী) বলেন, “لَمْ يَأْخُدُ عَنْ أَحَدٍ مِّنْهُمْ”।
“ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ কোনো সাহাবী থেকে রেওয়ায়েত নেননি।”২২
১০. হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ (৭৪৮ হিজরী) বলেন, “لَمْ يَثْبُتُ لَهُ حَرْفٌ عَنْ أَحَدٍ مِّنْهُمْ”।
“কোনো সাহাবী থেকে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ’র একটা হরফও নকল করা প্রমাণিত নয়।২৩
১১. হাফেয আবুল ফযল ইরাকী রহিমাহুল্লাহ (৮০৬ হিজরী) বলেন, “الإِمَامُ أَبُو حَنِيفَةَ لَمْ تَصِحُ لَهُ رِوَايَةٌ عَنْ أَحَدٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ”।
“কোনো সাহাবী থেকে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর রেওয়ায়েত করা প্রমাণিত নয়।”২৪
১২. হাফেয সাখাভী রহিমাহুল্লাহ (৯০২ হিজরী) বলেন, “الْمُعْتَمَدُ أَنَّهُ لَا رِوَايَةَ لَهُ عَنْ أَحَدٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ”।
“সঠিক কথা এটাই যে, কোনো সাহাবী থেকে ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহর রেওয়ায়েত নেই।”২৫
সারকথা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ রেওয়ায়েতধারী তাবেঈ ছিলেন না। রাবীগণের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা। ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত নয়।
১৩. ইমাম ইবনে হিব্বান রহিমাহুল্লাহ (৩৫৪ হিজরী) বলেন, “لَا يَجُوزُ أَن يُحْتَجَّ بِهِ عِنْدَ أَئِمَّتِنَا قَاطِبَةً لَا أَعْلَمُ بَيْنَهُمْ . خِلَافًا عَلَى أَنَّ أَئِمَّةَ الْمُسْلِمِينَ وَأَهْلَ الْوَرَعِ فِي الدِّينِ فِي جَمِيعِ الْأَمْصَارِ وَسَائِرِ الْأَقْطَارِ جَرَّحُوهُ وَأَطْلَقُوا عَلَيْهِ الْقَدْحَ إِلَّا الْوَاحِدَ بَعْدَ الْوَاحِدِ”।
“আমাদের ইমামগণের (মুহাদ্দিগণের) মতানুযায়ী আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ-কে হুজ্জাত হিসেবে গণ্য করা জায়েয নেই। আমার মতে মুহাদ্দিসগণের মধ্যে এব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। সকল এলাকা ও সকল যুগের ইমামগণ আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে জারাহ করেছেন এবং প্রত্যেকে তার ব্যাপারে দূর্বল (যঈফ) সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন।২৬
১৪. হাফেয ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ (৫৯৭ হিজরী) বলেন, “اتَّفَقَ الْكُلُّ عَلَى الطَّعْنِ فِيهِ، ثُمَّ انْقَسَمُوا عَلَى ثَلَاثَةِ أَقْسَامٍ؛ فَقَوْمُ طَعَنُوا فِيهِ لِمَا يَرْجِعُ إِلَى الْعَقَائِدِ وَالْكَلَامِ فِي الْأُصُولِ، وَقَوْمٌ طَعَنُوا فِي رِوَايَتِهِ وَقِلَّةِ حِفْظِهِ وَضَبْطِهِ، وَقَوْمٌ طَعَنُوا فِيهِ لِقَوْلِهِ بِالرَّأْي فِيمَا يُخَالِفُ الأَحَادِيثَ الصِّحَاحَ”।
“আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর পরিত্যক্ত হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসের ঐক্যমত আছে। (আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর ব্যাপারে) জারাহ করেছেন এমন মুহাদ্দিসগণ তিন ধরনের-
(ক) মুহাদ্দিসগণের একটি অংশ আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর আকীদা ও উসূলের ব্যাপারে জারাহ করেছেন।
(খ) মুহাদ্দিসগণের একটি অংশ আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর রেওয়ায়েত ও মুখস্তবিদ্যার দুর্বলতার উপর জারাহ করেছেন।
(গ) মুহাদ্দিসগণের আরেকটি দল আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর উপর জারাহ করতেন কারণ তিনি সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে তার রায় কায়েম করতেন।২৭
তিনি আরো বলেনঃ “لَمْ يَبْقَ مُعْتَبَرٌ مِنَ الْأَئِمَّةِ إِلَّا تَكَلَّمَ فِيهِ”।
“আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর ওপর জারাহ করেননি এমন কোন নির্ভরযোগ্য ইমাম নেই।”২৮
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাবেঈ ছিলেন না এবং হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল রাবী ছিলেন। সেজন্য তার বর্ণনা করা হাদীস মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেননি। সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে নিজস্ব রায় কায়েম করার কারণেও মুহাদ্দিসগণ তার সমালোচনা করেছেন।২৯
১. সুওয়ালাতুস সাহমী লিদ দারাকুতনী, পৃ: ২৬৩, সংখ্যা: ৩৮৩; তারীখে বাগদাদ লিল খতীব, ৫/৩৪০; আল ইলালুল মুতনাহিয়্যাহ লি ইবনুল জাওযী, ১/৬৫
২. তারীখে বাগদাদ ৫/৩৩৮, ১০/১৬১
৩. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৩/৩৮৭
৪. আল আসামী ওয়াল কুনা লি আবী আহমাদ আল হাকিম আল কাবীর, ৩/৬৪; মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা, পৃ: ১৪; তারীখে ইসলাম, ৩/৯৯০; তাযকিরাতুল হুফফায, ১/১৬৮
৫. আখবারী আবী হানীফা ওয়া আসহাবিহী, পৃ: ১৮
৬. মীযানুল ইতিদাল লিয যাহাবী, ১/১৪০
৭. আয যুআফা ওয়া মাতরূকূন, পৃ: ৫৯
৮. আল ইসাবাতু ফী তামইইযিস সাহাবা, ৪/৫৭২
৯. তারীখে বাগদাদ, ১৫/৪৪৪
১০. আল ইলালুল মুতনাহিয়্যা, ১/১২৮
১১. শারহু মুসনাদি আবী হানীফা, ১/৫৮১
১২. আল ফিহরিস্ত, ১/২৯৮
১৩. লিসানুল মীযান, ৫/৭২
১৪. আল বাহরুর রাইক, ৭/৯২
১৫. তাবাকাতুল ফুকাহা, পৃ: ৮৬
১৬. জামিউল উসূল, ১২/৯৫২
১৭. ওয়াফাইয়াতুল আইয়ান, ৫/৩০৬
১৮. মুখতাসার ফী আখবারিল বাশার, ২/৫
১৯. তারীখে ইবনুল ওয়ারদী, ১/১৮৮
২০. মিরআতুল জিনান, ১/২৪৩
২১. তারীখুল মুতাবার, ৩/৩০১
২২. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ২/২১৬
২৩. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩৯১
২৪. শারহু মুসনাদ আবি হানীফা লি মুল্লা আলী আল কারী, ১/৫৮১
২৫. ফাতহুল মুগীস, ৩/৩৪২
২৬. কিতাবুল মাজরূহীন, ৩/৬৪
২৭. আল মুনতাযিম ফী তারীখুল মুলূক ওয়াল উমাম, ৮/১৩১-১৩২
২৮. আল মুনতাযিম ফী তারীখুল মুলুক ওয়াল উমাম, প্রাগুক্ত: ৮/১৪৩
২৯. সম্পাদক