বর্ষঃ ১ সংখ্যাঃ ১
জানুয়ারী, ২০২৪
শাইখুল আরব ওয়াল আযম শাইখ বদীউদ্দিন শাহ রাশেদী সিন্ধী
মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আসারী
মূল: শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ
Views: 324
নাম ও বংশপরিচয়: আবু মুহাম্মাদ বাদীউদ্দিন শাহ বিন সাইয়েদ ইহসানুল্লাহ শাহ রাশেদী বিন সাইয়েদ আবু তুরাব রুশদুল্লাহ বিন পীর রাশীদুদ্দীন শাহ বিন পীর মুহাম্মাদ ইয়াসীন শাহ পীর ঝান্ডোওয়াল বিন পীর মুহাম্মাদ রাশেদ শাহ আর রাশেদী আল হুসাইনী সিন্ধী।
জন্ম: শাইখ বাদীউদ্দীন শাহ রাশেদী পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের হায়দরাবাদ জেলার হালা তহসিলের অন্তর্গত নিউ সায়েদাবাদ সংলগ্ন গোঠ ফাযলুল্লাহ শাহ (সাবেক গোঠ পীর ঝাণ্ডা) নামক স্থানে ১০ জুলাই ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪২ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। রামোযে রাশেদীয়ার ১১ পৃষ্ঠায় তার জন্মতারিখ ১০ জুলাই ১৯২৫ ইং উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টি সাহেবও এটিকেই নির্বাচন করেছেন।১ কিন্তু শাহ সাহেবের পুত্র নূরুল্লাহ রাশেদী ২/৩/১৩৯৮ হিজরী তারিখে তার জন্মতারিখ ১২ মে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ লিখেছেন।২ প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউসুফ সাজ্জাদ সাহেব এই তারিখকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।৩ মুহাম্মাদ তানযীল সিদ্দিকী হুসাইনী সাহেব জন্মতারিখ হিসেবে ১৮ যিলহজ্জ ১৩৪৩ হিজরী মোতাবেক ১০ জুলাই ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ উল্লেখ করেছেন।৪ শাহ সাহেবের নাতি মুহতারাম নাসরাতুল্লাহ শাহ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন যে, তিনি (বাদীউদ্দিন শাহ রাশেদী) ১০ জুলাই ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৯ যিলহজ্জ ১৩৪৩ হিজরীতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার-এর মধ্যবর্তী রাত প্রায় ৩ টার সময় জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষকগণ:
১. আবু মুহাম্মাদ আব্দুল হক বিন আব্দুল ওয়াহীদ হাশমী বাহাওয়ালপুরী মুহাজিরে মাক্কী
২. ফাতিহে কাদিয়ান আবুল ওয়াফা সানাউল্লাহ অমৃতসরী
৩. হাফেয আব্দুল্লাহ রৌপড়ী
৪. আবু ইসহাক নেক মুহাম্মাদ অমৃতসরী
৫. আবুল কাসিম মুহিব্বুল্লাহ শাহ রাশেদী
৬. আবু সাঈদ শারফুদ্দীন দেহলভী
গ্রন্থসমূহ:
আরবী গ্রন্থসমূহ:
১. আত তওয়ামুল মুরঈশা ফী বায়ানুত তাহরিফাতি আহলুর রায় আল মুদহিশাহ: এই কিতাবে তিনি তাকলিদী আলেমদের বিকৃতি ও মিথ্যার পর্দা ফাঁস করেছেন যেন মুসলিমগণ তাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এই কিতাবটি মুহাক্কিক হাফেয সালাহুদ্দীন মকবুল আহমাদ (হাফি:) কৃত তাহকীকসহ কুয়েত থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আমার কাছে এই কিতাবের হাতে লেখা একটি কপি সংরক্ষিত আছে। ওয়ালহামদুলিল্লাহ।
২. আইনুশ শাঈন বিত তারকে রাফউল ইয়াদাঈন: ১১২ এর অধিক পৃষ্ঠাব্যপী প্রকাশিত এই কিতাবে মুকাল্লিদ মুহাম্মাদ হাশিম ঠাটভীকে ভালোভাবে রদ্দ করা হয়েছে।
৩. জালাউল আইনাঈন বিত তাখরিজি রাওয়াইয়াতুল বুখারী ফী জুযউ রাফউল ইয়াদাঈন: ১৯২ এর অধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত এই কিতাবটি বেশ কয়েকবার ছাপা হয়েছে। এই কিতাবটি মাওলানা ইরশাদুল হক আসারী লিখিত টীকা এবং ওস্তাযে মুহতারাম মাওলানা ফাইযুর রহমান সূরী (রহ:)-এর ব্যাখ্যা যুক্ত করে ছাপা হয়েছে। শাহ সাহেব এই জলীলুল কদর কিতাবে ইমাম বুখারী (রহ:)-এর বিখ্যাত কিতাব “জুযউ রাফউল ইয়াদাঈন”-এর তাহকীক ও তাখরীজ করে রাফউল ইয়াদাঈন অস্বীকারকারীদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন।
৪. আত তালীকুল মানসুর আলা ফাতহুল গফুর ফী তাহকীক ওয়া যআল ইয়াদাঈন আলাস সুদূর: এটি শাইখ মুহাম্মাদ হায়াত সিন্ধী (রহ:)-এর রিসালার তাহকীক ও তাখরীজ, যেখানে প্রমাণ করা হয়েছে যে নামাযে (পুরুষ ও মহিলাদের জন্য) বুকের ওপর হাত বাধা উচিত। ১৩৬ পৃষ্ঠা ব্যাপী এটির কম্পোজিং হয়ে গেছে, যেটাকে সম্মানিত ভাই যুলফিকার বিন ইবরাহীম আসারী (হাফি:) মদীনা থেকে অত্র লেখকের কাছে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন। আমার নিকটে সম্মানিত ভাই আব্দুল আযীয সালাফী (কাতিব) এর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিরও ফটোকপি সংরক্ষিত আছে, যা ৬৮ পৃষ্ঠা সমৃদ্ধ।
৫. আসসামাতুল ইবরিজ হাশিয়াহ মুসনাদ উমার বিন আব্দুল আযীয তালীফ ইবনুল বাগান্দী: এই কিতাবটি মাওলানা আব্দুত তাওয়াব মুলতানী (রহ:) (মৃত ১৩৬৬ হিজরী)-এর টীকাসহ প্রাচীন লিপিতে ৭৪ পৃষ্ঠাসহ প্রকাশিত হয়েছে। এই কিতাবে খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ:)-এর বর্ণনা সমূহকে মুহাদ্দীস ইবনে বাগান্দী বাগদাদী নিজস্ব সনদে সংকলন করেছেন। এই কিতাবটি মুহাম্মাদ আওয়ামা নামক একজন অপরিচিত-বিদআতী কৃত তাহকীক ও ভাষ্যসহ প্রকাশিত হয়েছে। উভয় কিতাবকে সামনে রাখলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, শাহ সাহেবের তাহকীক ও ভাষ্যকে উপরে উল্লিখিত মুহাম্মাদ আওয়ামা বিকৃত করেছে।
৬. ইনমাউয যুক্কান ফী তানকীদ ইনহায়ুসসিকান: এই কিতাবে শাহ সাহেব যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দীর কিতাব 'ইনহায়ুসসিকান' এর রদ্দ করেছেন এবং এই কিতাব কুয়েত থেকে 'নাকদ কাওয়াইদ ফী উলূমুল হাদীস' শিরোনামে ৪৭৮ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বইটিতে কম্পোজিং এবং প্রুফ রিডিং জনিত প্রচুর ভুল আছে, যেগুলোর জন্য শাহ সাহেব দায়বদ্ধ নন।
৭. যিয়াদাতুল খুশু বাওয়াযআল ইয়াদাঈন ফীল কিয়াম বাদার রুকু: “রুকু থেকে দাঁড়িয়ে কি হাত বাধা উচিত” মাসআলাটি ইজতেহাদী এবং উভয় ভাবেই আমল করা জায়েয, যদিও হাত ছেড়ে দেওয়া উত্তম। শাহ সাহেব এই পুস্তিকাটিতে প্রথম মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেখানে কীনা উনার বড় ভাই মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ শাহ (রহ:) দ্বিতীয় মতকে প্রাধান্য দিতেন।
এই পুস্তিকাটির জবাব মুবাল্লিগে আহলে হাদীস মাওলানা আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী (রহ:) (মৃ: ১৯৯১ খ্রি.)-এর পক্ষ থেকে 'মা ইয়াজুয ফিল কিয়াম বাদার রুকু ওয়াযআল ইয়াদাঈন উম্মা ইরসালুল ইয়াদাঈন' নামে প্রকাশিত হয়েছে।
৮. মানাযিদুল মুস্তাযীর লিরিওয়াইয়াতুস সুন্নাহ ওয়াল কিতাবুল আযীয: এই পুস্তিকাটি হলো শাহ সাহেবের সনদসমূহের সংকলন, যা তিনি তার ছাত্র ও এবং শিক্ষকদের উপহার হিসেবে প্রদান করতেন। তিনি নিম্নোক্ত ইজাযতনামাটি তার সীল-স্বাক্ষর দিয়ে ৮/৭/১৪০৬ হিজরীতে আমাকে পাঠিয়েছিলেন, যার একটি স্থানে তিনি সহীহ বুখারীর নিজস্ব সনদ নিম্নোক্ত শব্দে লিখেছেন৫,
فأخبرني الشيخ عبد الحق الهاشمي قال : أخبرنا أحمد بن عبدالله بن سالم البغدادي عن عبد الرحمن بن حسن بن محمد بن عبد الوهاب عن جده شيخ الإسلام عن عبد الله بن إبراهيم المدني عن عبد القادر التغلبي عن عبد الباقي عن أحمد الوفائي عن موسى الحجازي عن أحمد الشويكي عن العسكري عن الحافظ شمس الدين ابن القيم عن شيخ الإسلام الحافظ تقي الدين أبي العباس ابن تيمية عن الفخر ابن البخاري عن أبي ذر الهروي عن شيوخه الثلاثة السرخسي والمستملي والكشميهني عن محمد بن يوسف الفربري عن إمام الدنيا أبي عبد الله محمد بن إسماعيل البخاري
এই সনদে না শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী আছেন আর না আছেন শাহ আব্দুল আযীয মুহাম্মাদ ইসহাক!
৯. আল কনদীলুল মাশউল ফী তাহকীকুন হাদীস (ইকতালুল ফাঈল ওয়াল মাফউল): আমার জানামতে এই কিতাবটি অপ্রকাশিত। এটা ছাড়াও শাহ সাহেবের আরো অনেক আরবী গ্রন্থ রয়েছে। যেমন: ওয়াসূলুল ইলহাম লি উসূলুল ইসলাম (এই গ্রন্থগুলো হলো গায়রে মানকুত। অর্থাৎ এগুলোতে নুকতাওয়ালা কোনো হরফ ব্যবহৃত হয় নি।)
১০. জুযউ মানযুম ফী আসমাউল মুদাল্লিসীন (এটি ফাতহুল মুবীন-এর শেষাংশে যুক্ত হয়ে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে)।
১১. তাওফীকুল বারী বিতারতীব জুযউ রাফউল ইয়াদাঈন লিল বুখারী (এই পুস্তিকাটির শেষে শাহ সাহেব লিখেছেন: আল আব্দ আবু মুহাম্মাদ বাদীউদ্দীন শাহ আর রাশেদী আল মাক্কী) পাণ্ডুলিপিটি মোট ২১ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট।
১২. আল আজুয লি হিদায়াতুল আজুয (এটি খুব একটি চমৎকার গ্রন্থ)।
১৩. ইযহারুল বারাআতু আন হাদীস মান কানা লাহু ইমাম ফিকিরআতুল ইমাম লাহু কিরআহ
এতদ্ব্যতীত আরো অনেক গ্রন্থ আছে, যেগুলো প্রফেসর মিয়া মুহাম্মাদ ইউসুফ সাজ্জাদ কর্তৃক লিখিত “তাযকিরাহ ওলামায়ে আহলে হাদীস” নামক বইয়ে (২/২১২-২১৫) উল্লেখিত আছে।
ঊর্দূ গ্রন্থসমূহ:
১. তাওহীদে খালেস: অত্র বিষয়ের ওপর এটি একটি বৃহৎ কিতাব, যার কলেবর প্রায় ৬২৪ পৃষ্ঠাব্যাপী। এটি আকীদা বিষয়ক একটি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানভাণ্ডার।
২. ইমাম সহীহুল আকীদা হোনা চাহিয়ে
৩. তানকীদুস সাদীদ বি রিসালাহ ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ: ৪১২ পৃষ্ঠার এই চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ বইটি মুকাল্লীদ মুহাম্মাদ ইদ্রীস কান্দলভী দেওবন্দীর জবাবে লেখা হয়েছে, যার জবাব দিতে (আমার ইলম মোতাবেক) মুকাল্লীদরা অক্ষম।
৪. তাওয়াতির আমলী ইয়া হীলাহ জাদলী: তাকফীরী মাসউদ আহমাদ বি.এস-সি.-এর খণ্ডনে এই বইটি লিখিত হয়েছে।
৫. ইলাহী আতাব বার সিয়াহি খযাব
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক গ্রন্থ রয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন "তাযকিরাহ ওলামায়ে আহলে হাদীস (২/২১৬-২২১)"।
সিন্ধী গ্রন্থসমূহ:
১. বাদীউত তাফাসীর: সিন্ধী ভাষায় শাহ সাহেব অনেক কিতাব লিখেছেন, যেগুলোর মধ্যে বাদীউত তাফাসীর উনার অনেক বড় কর্ম। আফসোস এই যে, এই তাফসীর কেবল ১৪ পারা পর্যন্ত লেখার পর তিনি ইন্তেকাল করেন।
২. তামীযুত তাইয়্যেব মিনাল খবীস বাজাওয়াব রিসালাহ তুহফাতুল হাদীস: বড় সাইজের এবং চিকন ফন্টে ৫৬৬ পৃষ্ঠার এই বইটি সিন্ধী ভাষায় লিখিত আহলে হাদীস মাসলাকের বিজয় এবং মুকাল্লীদদের পরাজয়ের উজ্জ্বল দলীল।
৩. আত তানকীদুল মাযবুত ফী তাসউয়ীদ তাহরীরুল মালবুত (ফিকহ ওয়া হাদীস)
৪. আল আরবাঈন ফীল জাহরু বাত তামীন
৫. তাকরীর দিলপাযীর বানাম বারাআত আহলে হাদীস
৬. আল মাবসুতাল মাগবুত ফী জাওয়াবুল মাখতুতাল মাহবুত: এই কিতাবেই শাহ সাহেব লিখেছেন, “নওয়াব ওয়াহীদুযযামান আহলে হাদীস ছিলেন না।”(পৃ-৯২)
এগুলো ছাড়াও "ফাতাওয়ায়ে বাদীইয়াহ" সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
ছাত্রগণ:
১. শাইখ আব্দুল কাদীর বিন হাবীবুল্লাহ সিন্ধী মাদানী রহিমাহুল্লাহ (শাইখ আব্দুল কাদীরের সাথে মদীনা মুনাওয়ারাহতে উনার বাসায় আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো। তিনি ছিলেন দুর্বল দেহের অধিকারী, কিন্তু অত্যধিক ইলমসম্পন্ন আলেম ছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন।)
২. হাফিয ফাতহী মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ
৩. হামদী আব্দুল মাজীদ সালাফী ইরাকী
৪. বাশার আওয়াদ মারুফ
৫. শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদীঈ আল ইয়ামানী রহিমাহুল্লাহ
৬. আবু সাঈদ ইয়ারবুযী তুরকী
৭. শাইখুস সালিহ আসিম আব্দুল্লাহ কারইয়াওতী
৮. শাইখুস সালিহ আল ইমাম ওয়াসীউল্লাহ বিন আব্বাস মাদানী মাক্কী হাফিযাহুল্লাহ
৯. রাবী বিন হাদী আল মাদখালী
১০. শাইখ আব্দুল আযীয নূরীস্তানী হাফিযাহুল্লাহ
১১. হাফিয আব্দুল্লাহ নাসির রাহমানী হাফিযাহুল্লাহ
এছাড়াও শাহ সাহবের অসংখ্য ছাত্র ছিলো এবং আছে যাদের মধ্যে মাওলানা আবু খুযাইমা মুহাম্মাদ হুসাইন যাহিরী এবং অত্র লেখকেরও (শাইখ আলী যাঈ) ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রফেসর মিয়া মুহাম্মাদ ইউসুফ সাহেব শাহ সাহেবের অনেক মুনাযারা-এরও বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
হকপন্থী আলেমগণের দৃষ্টিতে শাহ সাহেব:
১. আত তালীকাতুস সালাফীয়্যাহ-এর লেখক মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভুজিয়ানী (রহ:) বলেছেন: “তিনি আমাদের জামাআতের মর্যাদামণ্ডিত মুহাক্কিক এবং সিন্ধ এর বিখ্যাত রাশেদী বংশের প্রধান।”৬
শাহ সাহেবের পরিচিতি ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত রয়েছে এবং তিনি প্রকৃত অর্থেই নির্ভরযোগ্য ও তাকওয়াবান ইমাম ছিলেন।
২. মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ শাহ রাশেদী একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ثقة” অর্থাৎ “তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন”।
৩. মাওলানা মুহাম্মাদ সাদীক বিন আব্দুল আযীয সারগোধী বলেন, “তিনি মুহাক্কিক আলেম ছিলেন।”
৪. মদীনায় মুহাম্মাদ বিন হাদী আল মাদখালীর বাসায় আমি উনাকে এটা বলতে শুনেছি যে, “উনার সম্পর্কে আমরা ভালো কথা শুনেছি।”
৫. ফালাহ বিন নাফী হারবী মাদানী বলেন, “তিনি আহলে হাদীস ছিলেন, সুন্নাতের অনুসারী ছিলেন এবং আল্লাহ উনার মাধ্যমে উপকার পৌছিয়েছেন।” (আনওয়ারুস সাবীল ফী মীযানুল জারহু ওয়াত তাদীল, পৃ: ২৬)
কিছু স্মৃতি:
শাহ সাহেব লেখালেখিতে (বিশেষ করে কুরআনের তাফসীর) ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তালেবে ইলমদেরকে সময় দিতেন। যখন কিতাব পড়াতেন তখন বোঝা যেত যে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পড়াচ্ছেন। যাইহোক, এটা উনার হিফযের ফল ছিলো যা আল্লাহ তাআলা তাকে দান করেছিলেন। জটিল থেকে জটিল ইবারত উনার মুখে যেন মোমের মতো নরম হয়ে যেত এবং এতে তার কোনো প্রকারের সমস্যা হতো না। খারেজী এবং তাকফিরীদের তিনি কঠিন বিরুদ্ধবাদী ছিলেন এবং আহলে সুন্নাত (আহলে হাদীস) মাসলাকের উপর দৃঢ় ছিলেন। শাহ সাহেবের প্রত্যেক নামায অত্যন্ত খুশু-খুযুপূর্ণ ছিলো, মনে হতো যেন এটাই উনার শেষ নামায।
লেখকের সাথে উনার আচরণ স্নেহপূর্ণ ছিলো। একবার তিনি একটি প্রোগ্রামের জন্য রাওয়ালপিণ্ডিতে আসলে অনেক সময় ধরে আমাকে বুকের সাথে লাগিয়ে রেখেছিলেন।
তিনি বাদীউত তাফাসীর লেখানোর সময় লিপিকারদেরকে বারবার নির্দেশনা দিয়ে বলতেন, অমুক কিতাব নিয়ে আসো এবং অমুক জায়গা থেকে অমুক জায়গা পর্যন্ত হাওয়ালা লেখো। তিনি ছিলেন আরবী সাহিত্যের ইমাম, যার একটি স্পষ্ট প্রমাণ হলো তার লিখিত আহকাম সম্বলিত গ্রন্থ “উসূলুল ইলহাম”।
মৃত্যু: ৮ জানুয়ারী, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৬ শাবান, ১৪১৬ হিজরী মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯টার সময় মসজিদে রাশেদিয়ার নিকটে করাচীতে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং (পীর ঝাণ্ডা) নিউ সায়েদাবাদে উনাকে দাফন করা হয়েছে। রহিমাহুল্লাহ রহমাতান ওয়াসিআহ আমিন।
১. বার্রে সাগীর কে আহলে হাদীস খুদ্দামে কুরআন, পৃ: ১০২
২. তাওহীদে খালেস, পৃ: ৩
৩. তাযকিরায়ে ওলামায়ে আহলে হাদীস, ২/১৫৬
৪. আসহাবুল ইলম ওয়া ফাযাল, পৃ: ৪৪
৫. মানাযিদুল মুস্তাযীর, পৃ: ১০-১১
৬. তাসদীর তানকীদ সাদীদ, পৃ: ৭