ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা

বর্ষঃ ১ সংখ্যাঃ ৩
মার্চ, ২০২৪

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা

মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আসারী

Views: 279

Share:

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযূ করার যে পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন তন্মধ্যে ঘাড় মাসাহ করার কোনো উল্লেখ নেই। সাহাবায়ে কেরাম রিযওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাইন-এর মধ্য হতে কেউই ঘাড় মাসাহ করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকলীদপন্থীরা এটিকে মুস্তাহাব বলেন। উদাহরণস্বরূপ, জনাব আনোয়ার খুরশীদ দেওবন্দী লিখেছেন, “ঘাড় (গ্রীবা) মাসাহ করা মুস্তাহাব।”

পাঠকবৃন্দ! মুকাল্লীদদের চালাকী দেখুন, যখন তারা ঘাড় মাসাহ করার কোনো হাদীস পেলো না তখন তাদের আকাবিরদের অনুসরণ করতে গিয়ে সুন্নাতের বিপরীত ফিকহকে বাঁচানোর জন্য ঘাড়ের অর্থ ‘গ্রীবা’ করা শুরু করে দিলো। যদিও আমাদের অভিযোগ হলো গর্দানের উভয় দিকে দুই হাতের পিঠ দ্বারা মাসাহ করা। তাদের উচিত এই আমল থেকে বিচ্যুত না হওয়া। বরং এর উপরেই একনিষ্ঠ থেকে এর উপর কোন একটি সহীহ হাদীস পেশ করা। কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো। “فان لم تفعلوا ولن تفعلوا فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة”- “যদি তোমরা না পার এবং কক্ষনো পারবেও না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর।” চলুন, উনাদের সংকলিত দলীলসমূহের পর্যালোচনা দেখে নিই।

১ম দলীল:

عن ابن عمر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : من توضا ومسح على عنقه ، وفي الغل يوم القيمة

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযূ করলো এবং তার উভয় হাত দ্বারা নিজের ঘাড়কে (গ্রীবা) মাসাহ করলো তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন বেড়ী (পড়ানো) থেকে বাঁচানো হবে।”

পর্যালোচনা:

১. এই রেওয়ায়েতটি যঈফ। হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ লিখেছেনঃ "بین ابن فارس و فليح مفازة"। “ইবনে ফারীস আর ফুলাইহ এর মাঝে (বিচ্ছিন্নতার) দীর্ঘ ব্যপ্তি রয়েছে।”৪ দেওবন্দীদের উচিত এই দলীলের পূর্ণাঙ্গ সনদ পেশ করা। ইসলাম হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘মুত্তাসিল, সহীহ’ হাদীসের নাম, নাকি ‘মুনকাতি ও যঈফ’ বর্ণনার!

২. এই যঈফ বর্ণনাতেও তাদের প্রচলিত হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা গলা পর্যন্ত মাসাহ করার কোনো প্রমাণ নেই।

২য় দলীল:

عن ابن عمر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : من توضا ومسح يديه على عنقه أمن يوم القيمة من الغل

হযরত ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ওযূ করলো এবং তার দুই হাত দিয়ে ঘাড় (গ্রীবা) মাসাহ করলো তাহলে সে কিয়ামতের দিন বেড়ী (পরানো) থেকে বেঁচে থাকবে।”

পর্যালোচনা:

এটি সনদহীন হওয়ার কারণে পরিত্যাজ্য। ভিত্তিহীন কথার সাথে কি দ্বীনে হক এর কোনো সম্পর্ক আছে?

৩য় দলীল:

عن ليث . عن طلحة بن مصرف عن أبيه عن : به عن جده أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم مسح مقدم رأسه حتى بلغ القذال من مقدم عنقه

হযরত তালহা বিন মুসাররাফ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন যে, তিনি তার মাথার অগ্রভাগে মাসাহ করলেন এমনকি তিনি (তার হাতকে) মাথার শেষভাগ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন।”

পর্যালোচনা:

১. এটির সনদও যঈফ। কেননা লাইস ইবনে আবী সুলাইম জমহুরদের নিকটে যঈফ ও মুখতালিত্ব। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইমাম দারাকুতনী, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, ইমাম আবু হাতেম আর রাযী, ইমাম আবু যুরআহ আর রাযী, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে আদী এবং জমহুর মুহাদ্দিসীন তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।

তার সম্পর্কে হাফেয ইরাকী লিখেছেন, "ضعفه الجمهور"। “অধিকাংশগণ তাকে যঈফ বলেছেন।”

হাফেয হাশেমী লিখেছেন, "وضعفه الأكثر"। “বেশীরভাগ মুহাদ্দিস তাকে যঈফ বলেছেন।”

হাফেয ইবনুল মুলাক্কিন লিখেছেন, "ضعيف عند الجمهور"। “তিনি অধিকাংশের নিকট যঈফ।”

বূসীরী বলেছেন, "ضعفه الجمهور"। “অধিকাংশ তাকে যঈফ বলেছেন।”১০

হাফেয ইবনে হাজার তাকে ‘যঈফুল হিফয’ বলেছেন।১১

এরপরও তার রেওয়ায়েত দ্বারা দেওবন্দীদের দলীল গ্রহণ করা একেবারেই বিস্ময়কর!

২. মাথা মাসাহ করার সময় গ্রীবা পর্যন্ত হাত নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্কের দূর্গ শক্ত না করে বরং তাকলিদপন্থীদের উচিত ঘাড়ের পরিধি মাসাহ করার সময়ে উভয় হাতের উল্টোপিঠ গলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার উপর কোন একটি হাদীস পেশ করা।

৪র্থ দলীল:

عن طلحة عن أبيه عن جده أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم يمسح رأسه حتى بلغ القذال وما يليه من مقدم العنق بمرة

হযরত তালহা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন যে, তিনি তার মাথা মাসাহ করছেন এমনকি তিনি (নিজের হাত) মাথার শেষভাগ এবং তার অগ্রবর্তী ঘাড়ের উপরের অংশে এক বার নিয়ে গেলেন।”১২

পর্যালোচনা:

হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ লিখেছেন, "اسناده ضعيف كما تقدم"। “এর সনদ যঈফ যেমনটা পূর্বে ব্যক্ত করা হয়েছে।”১৩

এটি সম্পূর্ণরূপেই পূর্বোক্ত রেওয়ায়েত। লাইস ইবনে আবী সুলাইম এর ওপর কৃত জারাহসমূহ আপনারা পড়ে ফেলেছেন। দেওবন্দী সাহেব খামোখা কিতাবের আকার বৃদ্ধি করার জন্য বারবার একই জিনিস উদ্ধৃত করেছেন। একটু পূর্বেই উনার দাবি ছিলো যে, আমাদের কাছে অনেক হাদীসভিত্তিক দলীল আছে। এই হলো তার দলীলের অবস্থা!

৫ম দলীল:

عن موسى بن طلحة قال : من مسح قفاه مع رأسه وفى الغل يوم القيمة ، قلت : فيحتمل أن يقال هذا وان كان موقوفا فله حكم الرفع

হযরত মূসা বিন তালহা বলেছেন, যে তার মাথার সাথে ঘাড়ও মাসাহ করলো তাকে কিয়ামতের দিন বেড়ী (পরানো) থেকে বাঁচিয়ে রাখা হবে।

হাফেয ইবনে হাজার বলেন যে, “এই হাদীসটি যদিও মওকুফ, কিন্তু এর হুকুম মারফু।”১৪

পর্যালোচনা:

এটিরও সনদ যঈফ। আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ মাসউদী শেষ জীবনে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে গিয়েছিলেন। আব্দুর রহমান বিন মাহদী, যিনি এই রেওয়ায়েতটিকে তার থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বিভ্রান্তির পরে তার থেকে রেওয়ায়েত নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে নুমাইর বলেছেন, "المسعودي كان ثقة ، فلما كان بأخرة اختلط ، سمع منه عبد الرحمن بن مهدي ويزيد بن هارون أحاديث مختلطة"। “মাসউদী নির্ভরযোগ্য ছিলেন। কিন্তু শেষ বয়সে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে গিয়েছিলেন। আব্দুর রহমান বিন মাহদী ও ইয়াযীদ বিন হারুন তার থেকে ত্রুটিযুক্ত বর্ণনা শুনেছেন।”১৫

এটি হলো বিস্তারিত জারাহ। আর তাদীলের তুলনায় বিস্তারিত জারাহ বেশী গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয় কথা এই যে, মূসা বিন তালহা হলেন তাবেঈ এবং (তিনি) সরাসরি নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। এই কারণে এটি মুরসালও বটে। অতএব এই রেওয়ায়েতটি দলীলযোগ্য নয়।

৬ষ্ঠ দলীল:

حدثني طلحة بن مصرف عن أبيه عن جده كعب بن عمرو اليمامي أن رسول الله صلى الله عليه وسلم توضأ فمضمض ثلاثا واستنشق ثلاثا يأخذ لكل واحدة ماء جديدا وغسل وجهه ثلاثا فلما مسح رأسه قال هكذا وأوماً بيده من مقدم رأسه حتى بلغ بهما إلى أسفل عنقه من قبل قفاه

হযরত কাব বিন আমর থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযূ করলেন। তিনবার কুলি করলেন এবং তিনবার নাকে পানি দিলেন। প্রত্যেকবার তিনি নতুন পানি নিলেন। অতঃপর তিনবার তার চেহারা ধুলেন। যখন তিনি মাথা মাসাহ করলেন তখন এইভাবে করলেন। রাবী তার হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথার অগ্রভাগ থেকে (মাসাহ শুরু করলেন) এমনকি নিজের হাতদ্বয়কে গ্রীবার দিক থেকে গর্দানের নিচ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন।১৬

পর্যালোচনা:

এটি সনদহীন হওয়ায় মারদূদ ও বাতিল এবং মনোযোগ পাওয়ার অযোগ্য। সনদহীন রেওয়ায়েত সংকলন করে সেটাকে তাহকীকের নাম দেয়া মুকাল্লিদদেরই বৈশিষ্ট্য।

৭ম দলীল:

عن وائل بن حجر في حديث طويل فغسل وجهه ثلثا وخلل لحيته ومسح باطن أذنيه ثم أدخل خنصره في داخل أذنه ليبلغ الماء ثم مسح رقبته وباطن لحيته من فضل ماء الوجه ..... الحديث

“হযরত ওয়াইল বিন হুজর থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার চেহারাকে তিনবার ধৌত করলেন। অতঃপর দাড়ি খিলাল করলেন এবং কানের ভিতরে মাসাহ করলেন। কনিষ্ঠ আঙুল কানের ভিতরে ঢুকালেন যাতে পানি ভিতরে পৌঁছে। অতঃপর তিনি চেহারার অবশিষ্ট পানি দ্বারা ঘাড় (গ্রীবা) এবং দাড়ির ভিতরে মাসাহ করলেন।”১৭

পর্যালোচনা:

১. এটির সনদ কয়েকটি কারণে অত্যন্ত যঈফ।

(ক) রাবী মুহাম্মাদ বিন হুজর যঈফ। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেছেনঃ “فيه بعض النظر”। “তার বিষয়ে কিছু সমালোচনা আছে।”১৮

(খ) আবু আহমাদ হাকেম বলেছেনঃ “ليس بالقوى عندهم”। “সে তাদের (মুহাদ্দিসগণের) নিকটে শক্তিশালী না।”১৯

(গ) সাঈদ বিন আব্দুল জাব্বার সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার লিখেছেনঃ “ضعيف”। “সে যঈফ।”২০

(ঘ) উম্মে ইয়াহইয়া মাজহুল। তার পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনাব ইবনে তুরকুমানী হানাফী লিখেছেনঃ “وأم عبد الجبار هي أم يحيى ، لم أعرف حالها ولا اسمها”। “আব্দুল জাব্বারের মাতাই হলো উম্মে ইয়াহইয়া। তবে আমি তার পরিচয়ও জানি না আর নামও জানি না।”২১

২. পাঠকবৃন্দ যদি নিজেরা ‘তাবারানী কাবীর’ হাতে নিয়ে এই রেওয়ায়েতটি অধ্যয়ন করেন তাহলে তারা জানতে পারবেন দেওবন্দীরা আমাদের বিপক্ষে এই রেওয়ায়েত পেশ করতে গিয়ে ইলমের বাজার থেকে খেয়ানতের মুকুট কিনে নিয়েছেন। বরং এটা বলাও ভুল হবে না যে, তারা এই (খেয়ানতের) ময়দানের মুকুটহীন সম্রাট বনে গেছেন। তারা এরকম স্বভাবের যে, ঐ একই রেওয়ায়েতের মধ্যে বুকে হাত বাধা, রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করা এবং উঁচু আওয়াজে আমীন বলা ইত্যাদিরও উল্লেখ থাকার পরও দেওবন্দী সাহেব ‘আল হাদীস’ বলে হজম করে ফেলেছেন। তার প্রতি প্রশ্ন থাকলো, উক্ত রেওয়ায়েতের আলোকে ঘাড় মাসাহ করার মাসআলার সাথে সাথে অন্যান্য সুন্নাতগুলোর ওপর আমল কেন করছেন না, অথচ কেবলমাত্র ঘাড় মাসাহ করার মাসআলা গ্রহণ করে “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ স্বীকার করো আর বাকী অংশ অস্বীকার করো” শীর্ষক আয়াতের উদাহরণ বনে যাচ্ছেন কেন?

৮ম দলীল:

عن وائل بن حجر في حديث طويل ثم مسح على رأسه ثلثا وظاهر أذنيه ثلثا وظاهر رقبته وأظنه قال وظاهر لحيته ثلثا الحديث

হযরত ওয়াইল বিন হুজর থেকে (অপর একটি দীর্ঘ হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় তিনবার মাসাহ করলেন এবং কানের উপরাংশে তিন বার মাসাহ করলেন, অতপর ঘাড়ের উপরে অংশে (গ্রীবা) মাসাহ করলেন। রাবী বলেন যে, আমার মনে পরে হযরত ওয়াইল এইটাও বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার দাড়ির উপরের অংশের উপরও তিন মাসাহ করলেন।”২২

পর্যালোচনা:

এটি সম্পূর্ণরূপেই পূর্ববর্তী রেওয়ায়েত। দেওবন্দীরা যঈফ রেওয়ায়েতকে বার বার উল্লেখ করে তাদের মূর্খ সঙ্গীদের মিথ্যা সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে, তাদের কাছে অনেক হাদীস মওজুদ রয়েছে। এই দাবীর অসারতা পাঠকেরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন। অধিকতর প্রশান্তির জন্য নীচের পর্যালোচনা দ্রষ্টব্য।

আনোয়ার খুরশিদ সাহেব তার সমস্ত দলীল পেশ করার পরে এভাবে পর্যালোচনা করেছেন, “উল্লিখিত হাদীস ও আসরসমূহ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ওযূ করার সময় ঘাড় (গ্রীবা) মাসাহ করা হলো মুস্তাহাব। হুজুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম নিজেও ঘাড় (গ্রীবা) মাসাহ করেছেন এবং লোকদেরকেও ঘাড় (গ্রীবা) মাসাহ করার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু এই সকল হাদীস ও আসারের বিপক্ষে গায়ের মুকাল্লিদদের উক্তি হলো- কোন হাদীসে ঘাড় মাসাহ করার কোন উল্লেখ নেই। ঘাড় মাসাহ করা হলো ‘দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযুক্তি’।”২৩

পর্যালোচনার উপর পর্যালোচনা:

উনার উল্লেখকৃত ‘হাদীস ও আসার’ সমূহের মুখোশ আমরা খুলে দিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে একটি রেওয়ায়েতও প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দ্বীন হলো ‘সহীহ হাদীস’-এর নাম, ‘যঈফ ও মনগড়া’ রেওয়ায়েতের নয়। উপরন্তু, তাদের মধ্যে প্রচলিত ঘাড় মাসাহ (ঘাড়ের অংশে হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা মাসাহ) করা ঐ যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় না। সুতরাং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাড় মাসাহ করেননি, অন্যদেরকেও এমনটি করার তাগিদ দেননি। বরং এটি হলো মুকাল্লিদদের নিছক দুষ্কর্ম। এরকম ভিত্তিহীন রেওয়ায়তসমূহের বিরোধীতা করা আহলে হাদীছদের জন্য একটুও কষ্টকর নয়। প্রমাণিত হলো যে এই আমলটি বিদআত।

দেওবন্দী সাহেব আরো লিখেছেন, “এই হলো গায়ের মুকাল্লিদদের পরিণাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলকে বিনা দ্বিধায় বিদআত বলে আখ্যা দেওয়া। আলইয়াযুবিল্লাহ!”

পর্যালোচনার উপরে পর্যালোচনা:

এই হলো তাকলিদপন্থীতার পরিণাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সুন্নাহর অনুসরণকারী সাহাবায়ে কেরাম রিযওয়ানুল্লাহু আলাইহিম আজমাঈন থেকে অপ্রমাণিত নিজেদের বানানো আমলকে বিনা দ্বিধায় মুস্তাহাব বলে আখ্যা দেওয়া। আলইয়াযুবিল্লাহ!

এখন পাঠকবৃন্দই ফয়সালা করুন যে, যা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেননি, সাহাবাদেরকেও তার তালীম দেননি এবং সাহাবায়ে কেরামও এমনটি করেননি- এমন আমলকে মুস্তাহাব আখ্যা দেয়া কি হাদীসের অনুসরণ নাকি বিরোধিতা?


১. হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮২
২. বাকারা ২/২৪
৩. হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮২-১৮৩; ইলাউস সুনান ১/১২০
৪. আত তালখীসুল হাবীর, ১/৯৩
৫. মুসনাদুল ফিরদাউস মাআ তাসদিউল কওস, ৪/৪৪; হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৩; ইলাউস সুনান ১/১২০
৬. তাহাবী, ১/২৮; হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৩; ইলাউস সুনান ১/১২০-১২১
৭. আল মুগনি আন হামলিল আসফার ফীল আসফার, ২/১৭৮; তাখরীজুল আহাদীস আল ইহইয়াউ লিল হাদ্দাদ, ১৬৪৮
৮. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১/৯০-৯১, ২/১৭৮
৯. আল বাদরুল মুনীর লি ইবনুল মুলাক্কিন, ২/১০৪
১০. যাওয়াইদ ইবনে মাজাহ, ৫৪
১১. তাগলীকুত তালীক লি ইবনে হাজার, ২/৩৩৭
১২. মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৮১; হাদীস আওর আহলে হাদীস,  পৃ: ১৮৩-১৮৪
১৩. তালখীসুল হাবীর ১/৯২
১৪. হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৪; ইলাউস সুনান ১/১২২
১৫. আল জারহু ওয়াত তাদীল, ৫/২৫১, সনদ সহীহ
১৬. গায়াতুল মাকসুদ ১/১৩৭; হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৪-১৮৫; ইলাউস সুনান ১/১২১
১৭. মুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/৪২; হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৫; ইলাউস সুনান ১/১২৩
১৮. তারীখুল কাবীর, ১/৬৯
১৯. লিসানুল মীযান, ৫/১১৯
২০. তাকরীবুত তাহযীব, ২৩৪৪
২১. আল জাওহারুন নাফী, ২/৩০
২২. কাশফুল আসতার আন যাওয়াইদুল বাযযার, ১/৮৪০; হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৫-১৮৬; ইলাউস সুনান, ১/১২৪
২৩. হাদীস আওর আহলে হাদীস, পৃ: ১৮৬