বর্ষঃ ২ সংখ্যাঃ ১
জানুয়ারী, ২০২৫
ইসলাম ছাড়া ইনসাফ অসম্ভব
ইঞ্জি. তাহসিন আল মাহি
Views: 105
২০২৪ সালে বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলো। জুলাই বিপ্লব আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের এক শিক্ষা দিয়ে গেলো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই বিপ্লব তখনই পূর্ণাঙ্গ সার্থকতা পাবে যখন তা পরিপূর্ণরূপে ন্যায় ও সুবিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজ পর্যন্ত সুপরিবর্তনের আশায় মানুষ তার নিজস্ব মতবাদের ওপর ভিত্তি করে যত প্রচেষ্টা কিংবা বিপ্লব সংঘটিত করেছে তার প্রতিটি সত্যিকারার্থে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেশে দেশে রক্ত ঝরানো হচ্ছে সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই নতুন করে রক্ত ঝরানোর পথ খুলে দিচ্ছে। গণতন্ত্রের অহিংস-নির্মল রূপ কেবল বইয়ের পাতাতেই মানায়, বাস্তবতার ময়দানে নয়। একটি দেশের মানুষকে দলে দলে বিভক্ত করে তাদের পরস্পরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সংঘাতের পথ খুলে দেওয়াই গণতন্ত্রের আসল-কদর্য রূপ।
মানুষ যখনই সত্য ও ন্যায়ের মানদণ্ড তৈরী করতে চেয়েছে তখনই সে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ সকলের প্রতি সুবিচার করার মতো জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছাড়া সৃষ্টিকূলের আর কারো কাছে নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামল পর্যালোচনা করলে সেখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে ন্যায়, সুবিচার এবং জবাবদিহিতা অহরহ পাওয়া যায়। এর কারণ আল্লাহর বিধানের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়েছিলো দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে; যেখানে ভারত হিন্দুদের জন্য এবং পাকিস্তান মুসলিমদের জন্য। ইসলামের নামে পাকিস্তান গঠিত হলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছার অভাবে পাকিস্তানে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঘুরেফিরে তারা ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া কুফরী আইনকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। ব্যক্তিগতভাবে ঐসব নেতারা নিজেরাও আন্তরিকভাবে ইসলামপন্থী ছিলেন না। অন্যায়-অবিচার তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর তাদের চালানো বৈষম্যের স্টীমরোলারের ইতিহাস পড়লে মনেই হয় না ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ বলে তাদের মধ্যে অবশিষ্ট কিছু ছিলো। চরম এই বেইনসাফীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ জমা হতে থাকে।
সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর চালানো সেই সামরিক অভিযানের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সাধারণ জনগণ। যদিও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে ইনসাফ কার্যকর করার চেয়ে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারাই মুখ্য ছিলো। ফলে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাকিস্তানী বেইনসাফী থেকে মুক্তি পেলেও নতুন বেইনসাফী আমাদের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের মূলোৎপাটন আজও সম্ভব হয়নি। ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লব ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ ও সংগ্রামের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ঠিক একইভাবে তারা যদি ইনসাফের পক্ষে শক্ত অবস্থান না নেয় তবে এই বিপ্লব ব্যর্থ হতে খুব বেশী সময় নিবে না। ইসলাম ও ইনসাফ সমার্থক এতে সত্যানুসন্ধানীদের মনে তিল পরিমাণ সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই সত্যিকারার্থে ইনসাফ বাস্তবায়ন করতে এবং এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে ইসলাম ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই।